৫ দফা দাবিতে রোহিঙ্গাদের বিশাল সমাবেশ
অজিত কুমার দাশ হিমু, কক্সবাজার থেকে: ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেদেশের সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে পরবর্তী একমাস পর্যন্ত প্রায় ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থী বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল।
ওই বছরের ২৫ আগস্ট রাত থেকে রাখাইনে ভয়াবহ সহিংস ঘটনার দ্বিতীয় বছর পূর্তি উপলক্ষে সমাবেশ করার প্রশাসনিক অনুমতি না নিয়েও রোববার (২৫ আগস্ট) সকালে উখিয়ার মধুরছড়া এক্সটেনশন-৪ ক্যাম্পের খোলা মাঠে বিশাল জনসমাগমের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচারসহ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত, ভিটেবাড়ি পুনরুদ্ধার, আন্তজার্তিক নিরাপত্তা জোরদার ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য বিশ্ব বিবেকের কাছে আকুতি জানিয়ে এই দিবসটি পালন করে রোহিঙ্গারা। এতে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের উনচিপ্রাংসহ বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রাখাইনে সংগঠিত গণহত্যার বিচারের দাবিতে সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশগুলোতেও নাগরিকত্ব এবং ভিটেমাটি ফিরিয়ে দিয়ে প্রত্যাবাসন করার দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা ৫ দফা দাবী ও নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়ে অঙ্গীকার করে। পরে নির্যাতন ও নিপীড়নে নিহতদের মাগফিরাত ও নিজেদের শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’র চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ, মাস্টার আবদুর রহিম, মৌলভী ছৈয়দ উল্লাহ ও রোহিঙ্গা নারী নেত্রী হামিদা বেগমসহ অনেকেই।
এর আগে সকাল ৯টা থেকে দলে দলে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও নানা শ্লোগান নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকে বিভিন্ন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা। তাদের নানা শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মধুরছড়া এক্সটেনশন-৪ ক্যাম্প এলাকা।
এদিকে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে পূর্ব থেকে ঘোষনা দিয়ে এরকম দাবি-দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করায় স্থানীয় জনগণ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটসের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ উল্লাহ জানান, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছি। সমাবেশে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের জন্য মোনাজাত করেছি আমরা।
রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ বলেন, নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা এবং বসতভিটা ফেরতসহ রোহিঙ্গাদের ৫ প্রধান দাবি মেনে নিতে হবে। অন্যথায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাবে না।
এ বিষয়ে শরনার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম এনডিসি (অতিরিক্ত সচিব) জানান, ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জন্য একটা কঠিন দিন। এ দিনে তারা তো একটা সমাবেশ করতেই পারে।
উখিয়ার ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা শরনার্থীরা সমাবেশ করার বিষয়টি জেনেছি। তবে অনুমতির বিষয়টা তিনি জানেন না বলে জানান।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল মনসুর জানান, সকাল থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো শান্তিপূর্ণভাবে এ সমাবেশ করে শরণার্থী রোহিঙ্গারা। তবে সমাবেশের অনুমতির বিষয়টা ক্যাম্প ইনচার্জ জানবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে উখিয়ার স্থানীয় অধিবাসী নুর মোহাম্মদ সিকদার, রফিকুল ইসলাম রোহিঙ্গা শরনার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ করার অনুমতি দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের সমাবেশের কারণে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা আরো ভয়ংকর, মারমুখী ও হিংস্র হয়ে উঠবে। যেটা স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও প্রশাসনের জন্য পরে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
এছাড়া উখিয়া নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ নামের স্থানীয় জনসাধারণের গড়া একটি সংগঠন আগামী ৩১ আগস্ট শনিবার দ্রত রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসনের দাবীতে উখিয়া স্টেশন চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, রোববার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গা সংকটের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৭ সালের এ দিনে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। এরপর থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১১ লক্ষাধিক। বর্তমানে এসব রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে অবস্থান করছে।
Related News
পটিয়ায় বাসচাপায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রামের পটিয়ায় বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার ১২ (এপ্রিল) বিকেলেRead More
চট্টগ্রামে সুগার মিলে আগুনচট্টগ্রামে সুগার মিলে আগুন
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেকের একটি সুগার মিলে আগুন লেগেছে। সোমবার (৪Read More
Comments are Closed