Main Menu

অপমানের প্রতিশোধ নিতে স্কুল ছাত্রকে হত্যা

বড়লেখা সংবাদদাতা : অপমানের প্রতিশোধ নিতেই মৌলভীবাজারের বড়লেখায় স্কুল ছাত্র আব্দুল্লাহ হাসানকে (১৫) হত্যা করা হয়। আদালতে এমন স্বীকারোক্তিই দিয়েছে স্কুল ছাত্র হাসানের পরিবারের গাড়ি চালক এরশাদ মিয়া।

বুধবার (২৩ মে) বড়লেখা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. হাসান জামানের আদালতে এরশাদ মিয়া ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দেন বলে জানায় পুলিশ। ঘটনার প্রায় পৌনে চার মাস পর সূত্র-বিহীন চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যাকান্ডের প্রায় তিন মাস আগে হাসান তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক এরশাদকে চড় মারে। গ্যারেজে গাড়ি রাখতে গিয়ে কিশোর হাসানের শরীরে গাড়ি লাগিয়ে দেয় এরশাদ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাসান এরশাদকে চড় মারে ও গালিগালাজ করে। অবশ্য এ ঘটনায় হাসান গাড়ি চালকের নিকট কয়েকবার ক্ষমাও চেয়েছিলো। কিন্তু এরশাদ মিয়া তাকে ক্ষমা করেননি। ঘটনার প্রায় তিন মাস পর সুযোগ বুঝে তাকে হত্যা করে এ অপমানের প্রতিশোধ নেন। অপমান বোধ থেকেই তিনি হাসানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। জরুরী কথা আছে বলে হাসানকে নির্জন টিলায় নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এ হত্যা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইতে) স্থানান্তরের প্রায় তিন মাসের মাথায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেন।

জানা গেছে, গত ১৮ জানুয়ারি রাতে আব্দুল্লাহ হাসান বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়। সে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুর রহিমের ছেলে এবং সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মনির আহমদ একাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্র। ছেলে নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে ২৩ জানুয়ারি দেশে ফিরেন আব্দুর রহিম। নিখোঁজের ১০ দিন পর ২৮ জানুয়ারি রাতে মোহাম্মদনগর এলাকার একটি নির্জন টিলার ঢালু স্থানে আব্দুল্লাহ হাসানের খন্ডিত পচা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি নিহতের বাবা প্রবাসী আব্দুর রহিম ৩ জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন।

পরদিন পুলিশ আব্দুর নূর বলাই (৫০), তার ভাই বদরুল ইসলাম এবং বাদির ভাতিজা তারেক আহমদকে (২২) গ্রেপ্তার করে। হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ আসামীদের ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়।

মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা বড়লেখা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আসামীদের রিমান্ড শেষে স্কুলছাত্র হাসান হত্যাকান্ডের ব্যাপারে তাদের নিকট থেকে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। এর পরবর্তীতে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইতে) স্থানান্তর হয়।’

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বুধবার (২৩ মে) রাতে সাড়ে নয়টায় স্কুল ছাত্র আব্দুল্লাহ হাসান হত্যার ঘটনায় গাড়ি চালককে গ্রেপ্তার ও এতে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে চালক এরশাদের দেওয়া স্বীকারোক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘স্কুলে দিয়ে আসার সময় হাসান এরশাদকে চড় মারে ও গালিগালাজ করে। এতে এরশাদের মনে ক্ষোভ জন্মে। এ থেকেই সে ঘটনাটি ঘটিয়েছিল বলে স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে। সে (এরশাদ) ঠান্ডা মাথায় পূর্বপরিকল্পনা মতে এ হত্যাকান্ড ঘটালেও থেকেছিল সন্দেহের উর্ধ্বে। তার (এরশাদের) তিনটি কর্মকান্ডের উপর ভিত্তি করে আমরা তদন্ত করি। এর মধ্যে সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আত্মগোপন করে। এতে সন্দেহ আরো বেড়ে ওঠে। এসব কারণে তাকে আটকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত শনিবার (১৯ মে) তাকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু তিনি ৩ দিনের মধ্যে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তি প্রদান করেন।’

উল্লেখ্য, গাড়ি চালক এরশাদ মিয়া ভোলা জেলার শশীভুষন থানার চরমায়া গ্রামের কবির মিয়ার ছেলে। সে বড়লেখায় নিহত আব্দুল্লাহ হাসানের বাবার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ছিলেন।

Share





Related News

Comments are Closed