Main Menu

ডিঙিউথা হাওরপাড়ে ৫ হাজার জেলে পরিবারে দূর্দিন

মো. কামরুজ্জামান, নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ নেত্রকোনার বৃহত্তম হাওর ডিঙিউথা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রজাতির বিভিন্ন দেশীয় মাছ। এসব মাছ বিলুপ্তির ফলে হাওর পাড়ের খুরশিমুল, সিয়াদার, বলদশি, রামপাশা, তেতুলিয়া, পুঁটিউগা, চেছরাখালি, শামপুর সহ ২৫টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের মৎস্য জাতীয় আমিষের অভাব দেখা দিয়েছে। এতে কর্মসংস্থানের অভাবে ৫ হাজার জেলে পরিবারের চরম দূর্দিন দেখা দিয়েছে।

ভাটি বাংলা নেত্রকোনার বিশাল ডিঙিউথা হাওড় বর্ষায় ৬ মাস থাকে অথৈ জলে পরিপূর্ণ। একসময় এ হাওরের দেশিয় প্রজাতির মাছ এলাকার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হতো। আধুনিক মাছচাষ পদ্ধতি, জমিতে যথেচ্ছ সার, কীটনাশক প্রয়োগ, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, পোনা ও মা মাছ নির্বিচারে ধরা, জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা এসব কারণে সু-স্বাদু পুষ্টিকর দেশীয় মাছগুলো দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে।

বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলোর মধ্যে দারকিনা (ডানকানা), নানিদ, মাশুল, লাচো, কালিবাউস, পাবদা, চিংড়ি, বাতাশি, বোয়াল, বাঁশপাতা, বাচা, বাগাইড়, মাগুর, চাপলে উল্লেখযোগ্য।

মৎস্য সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় নির্বিচারে অবৈধভাবে রেণু পোনা, ডিম ও মা মাছ ধরার কারণে মাছে-ভাতে বাঙালি পরিচয় আর থাকছে না। ১৯৮৫ সালে প্রণীত মৎস্য আইনে ফেব্রয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত ১২ ইঞ্চির নিচে মাছ ধরা ও পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ১ এপ্রিল থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত শৈল, গজার ও টাকি মাছের পোনার ঝাঁক ও দম্পতি মাছধরা নিষেধ থাকলেও তা কেউ মানছে না। এসময় বিভিন্ন জলাশয়ের নানা প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়ে। এক শ্রেণির মাছ শিকারিরা কারেন্ট জাল ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে রেণু পোনা ও ডিম সংগ্রহে নেমে পড়ে। শীতকালে শ্যালো মেশিন দিয়ে পুকুর-খাল-বিল সেচে মাছ শিকার করে থাকে। ফলে মাছের বংশ শূন্যের কোটায় এসে দাঁড়িয়েছে।

দেশিয় মাছ কমে যাওয়ায় হাওর পাড়ের ৫ হাজার জেলে পরিবার বড় কষ্টে বেঁচে আছে। ক্ষমতাসিন প্রভাবশালী মহল যে যার আমলে জেলেদের নামে ভূয়া ইজারা নিয়ে থাকেন হাওরের জলাশয় ও নদী। ফলে দরিদ্র জেলেরা এসব জলাশয় নদীতে মাছ ধরতে পারে না। অনেক জেলে পৈতৃক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছে। হেমন্তকালে হাওরের পানি শুকিয়ে গেলে জেলেরা বেকার হয়ে পড়ে। তখন তাদের বাঁচতে হয় অর্ধাহারে অনাহারে। ব্যাংক থেকে বিনা সুদে ঋন পেলে বিকল্প উপায়ে বেঁচে থাকার পথ খুজে পেত বলে তাদের দাবী। হাওর অঞ্চলে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া দেশীয় প্রজাতির মাছের অভয়াশ্রম স্থাপন সহ প্রচুর পরিমানে পোনা মাছ ছেড়ে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এলাকাবাসী। হাওরবাসী এলাকাটিকে পুনরায় দেশীয় মাছের ভান্ডার হিসেবে গড়ে তুলতে কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।

খুরশিমুল গ্রামের জেলে পরিতোষ, বলদশি গ্রামের জগদিশ, সিয়াদার গ্রামের সোহাগ মিয়া, মল্লিকপুর গ্রামের রুপন দাস ও তেতুলিয়া গ্রামের হাসেন আলী জানান একই কথা-“হাওর নেতারা ইজারা নেয়ায় আমরা মাছ ধরতাম পারিনা। শুকনা কাল মাছ থাহে না তহন না খাইয়া থাহি। দেশি মাছ বাচানির লাইগা সরহারের সাহায্য দরহার। আমরারে বিনাসুদি ব্যাংক ঋন দিলে জাল নাও কিনতাম। বউ পোলাপান নিয়া বড় কষ্ট কইরা বাইচ্যা আছি।”

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীলিপ সাহা জানান, জেলেদের পরিচয় পত্র প্রদান প্রক্রিয়া চলছে। পরিচয় পত্রধারী অসহায় ও দূর্ঘটনায় পতিত জেলেকে সরকারী সহযোগীতা দেয়া হবে। কারেন্ট জালে মাছ ধরা বন্ধ করার জন্য মোবাইল কোর্ট কাজ করছে। তবে পোনা ও মা মাছ ধরা সহ পানি শুকিয়ে মাছ ধরা এবং জমিতে যথেচ্ছ সার কীটনাশক ব্যবহার বন্ধে কৃষককে সজাগ হতে হবে।

Share





Related News

Comments are Closed