Main Menu

‘সালমান শাহ মিউজিয়াম করবো’

কাইয়ুম উল্লাস: ৯০ দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের এক ধুমকেতুর নাম সালমান শাহ । অকাল প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র মামা আলমগীর কুমকুম। সিলেটে সবাই তাকে চিনে কুমকুম মামা নামে। পশু-পাখিকে তিনি খুবই ভালোবাসেন। তার মতে, পশু ভালোবাসা বুঝে। তাই সিলেটে দাড়িয়াপাড়ার সালমান শাহ ভবনের ভেতর গড়ে তুলেছেন ‘আলিজা প্রাণী আশ্রম’। সকাল থেকে বিকেল আশপাশের মানুষজন আসেন কুমকুম মামার বাড়ি। আলমগীর কুমকুম নীরবে সমাজের কল্যাণেও কাজ করে চলেছেন। সালমান শাহ’র রহস্যময় মৃত্যু কুমকুম আজও মেনে নিতে পারেননি। এ নিয়ে হৃদয়ে তার বহু আক্ষেপ রয়েছে। কথা হল নায়ক সালমানের মৃত্যু, প্রাণী আশ্রম ও তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক কাইয়ুম উল্লাস।
* সবাই আপনাকে মামা ডাকে, ব্যাপারটা কেমন লাগে ?
(হেসে) এটা খুবই গর্বের বিষয় যে, আমি প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র মামা। সে জন্যই বোধ হয় সবাই আমাকে মামা ডাকে। এতে আনন্দ লাগে। তবে, আমাকে কেউ আঙ্কেল ডাকলে মোটেই ভালো লাগে না। কেননা, আঙ্কেল ডাকে ভালোবাসা নেই।
* আপনার ছেলেবেলার স্মরণীয় ঘটনা বলেন…
তখন মুক্তিযুদ্ধ শেষে মাত্র দেশ স্বাধীন হল। চারপাশে ঝোপজঙ্গলে অস্ত্র-গ্রেনেড পরিত্যক্ত পড়েছিল। তখন এই দাড়িয়াপাড়ার বাসায় ছিলাম। ক্লাস সিক্সে পড়তাম। কাজের ছেলে রমজান আর আমি ঘুরে বেড়াতাম চারদিক। জঙ্গলে কুড়িয়ে পেলাম একটি ডিনামাইট। আমি কিন্তু থ্রিরার বই পড়তাম খুব। তো রমজান আর আমি ডিনামাইটটি নিয়ে আসি বাড়ির গুদাম ঘরে। নাড়াচাড়া করতে গিয়ে ডিনামাইটটি বিস্ফোরণ ঘটলো। রমজান ছিন্নভিন্ন। সেদিনই সে মারা যায়। আমি দুবছর হাসপাতালে ছিলাম। বেঁচে যাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখন বিদেশ যাওয়ার সময় প্রায়ই আমার শরীরটা স্কেনে ধরা পড়ে। তো আমাকে বলতে হয়, আমার শরীরে স্প্রিন্টার আছে।
* আপনি তো একসময় সিলেটে সক্রিয় ছাত্র রাজনীতি করেছেন, এখন রাজনীতি বিমুখ কেনো ?
আমি প্রথমে এইডেড স্কুলে, তারপর পাইলট স্কুল থেকে এসএসসি পাস করি। এরপর এমসি কলেজে ভর্তি হই। সেখান থেকেই আমার ছাত্র রাজনীতি শুরু হয়েছিল। মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সিলেট বিভাগীয় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ওই সময়ে জিয়াউর রহমান মারা যাবার পর রাজনীতিতে নোংরামি ঢুকে যায়। আমি তিন মাস কারাবাসে ছিলাম। বের হয়ে স্ত্রী নুরুন নাহার বেবী ও বড় ছেলে আলিজাকে নিয়ে বিদেশ চলে যাই। আমি লন্ডন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, কানাডা, মেক্সিকো ও আমেরিকা ঘুরেছি। এক বছর থেকে আবার দেশে আসি। এবার একা আমেরিকা যাই। তারপর স্ত্রী বাচ্চাদের নিই। প্রবাসে যাবার পর রাজনীতি একদম ছেড়ে দিই।
* আপনি তো বার বার দেশে ফিরে আসেন, কেনো ?
আসলে দেশের মাটি টানে, তাই বার বার দেশে আসি। তাছাড়া পৈতৃক জমিজমা দেখাশোনা ও সালমান শাহ ভবন দেখতেও বাড়িতে ছুটে আসি। এখানে দেশে ৫/৬ মাস থাকি আবার চলে যাই।
*আপনার ছেলে আলিজার নামে বাড়িতে একটি প্রাণী আশ্রম করেছেন, ব্যাপারটা খুলে বলবেন ?
আমার বড় ছেলে আলিজা। বর্তমানে আমার তিন ছেলে এক মেয়ে। তারা আমেরিকাতেই পড়ালেখা করছে, চাকরিও করছে। তবে, একটি ভবনের ছাদ থেকে ইট পড়ে আলিজা মারা যায়। তার মৃত্যু আমাকে আজও কাঁদায়। তাই ওর প্রতি ভালোবাসা থেকেই এখানে তার নামে একটি প্রাণী আশ্রম করেছি। তবে, আমি পশুপাখিকেও ভালোবাসি। কারণ, পশুপাখি ভালোবাসা বুঝে। তাছাড়া এখানে সৌন্দর্য-শখও কাজ করেছে। দেখুন, এখন পাখির ডাক ওঠে গেছে। আমি খুব কাছ থেকেই এখানে পাখি দেখি, ডাক শুনি। দেখুন, বাঘ-সিংহ কিন্তু সজারুকে ভয় পায়, ওর গা ঝাড়া দিলে ফলা বিদ্ধ হবার ভয়। আমার এখানে একটি সজারু আছে। আমি তাকে ভয় পাইনা। কারণ, ওটা আমার ভালোবাসা বুঝতে পেরেছে।
* প্রাণী আশ্রমে কি কি প্রাণী আছে , এটি নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী ?
এখানে চিল, টিয়া, তিতর, কালিম, সাদা বক, বালিহাঁস, বানর আছে। তবে, টাইগার নামে একটি কুকুর আছে। সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভবিষ্যতে এটি আরও বড় পরিসরে করার ইচ্ছা আছে। কেননা, এখন বাড়িতে আশ্রমটি দেখার জন্য মানুষ আসেন।
* শুনেছি, আপনি নীরবে গরীব স্কুল শিক্ষার্থীসহ অসহায় মানুষকে সাহায্য করেন ?
আমার খুব খারাপ লাগে যখন দেখি টাকার অভাবে একটি গরীব শিশু পড়তে পারছে না। আশপাশে এরকম দেখলেই আমি সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করি। ৬-৭ জন শিক্ষার্থীকে আমি নিয়মিত বেতন দিই। কারো স্কুল ব্যাগ নেই, আমি ব্যাগ কিনে দেই।
* সমাজের কল্যাণে আর কী করতে ইচ্ছে জাগে ?
আসলে ইচ্ছে থাকলে উপায় নেই। এই দেশে প্রকৃত ভিক্ষুক নেই। ভিক্ষাবৃত্তি একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই জিনিসটা দেশের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করছে। ইচ্ছে করে দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি তুলে দিবো। কিন্তু এটা তো একার পক্ষে সম্ভব না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভাবলে দেশবাসী কাজ করতো।
kumkum 3* আপনার বাড়িটির নাম সালমান শাহ ভবন। সিলেটে এই ভবনে সালমান ভক্তরা আসেন, এখানে কোনো সালমান মিউজিয়াম করার ইচ্ছে আছে কী ?
অবশ্যই আছে, বর্তমানে সালমানের জন্য ছোট্ট একটি ঘরে তার ছবি আছে। কিন্তু তার কিছু ব্যবহৃত জিনিস নিয়ে সিলেটে একটি সালমান মিউজিয়াম করবো।
* সালমান শাহ’র মৃত্যু ভক্তদের জন্য আজও রহস্যময় থেকেই গেল, এ বিষয়ে যদি কিছু বলেন…
দেখুন, সালমান শাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে সামিরা চক্র। ৫ সেপ্টেসম্বর বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় সালমান আমাকে ফোন করে বলেছিল, ‘ মামা, আমি কালই সিলেটে আসছি, সিদ্ধান্ত নিয়েছি , সামিরাকে (স্ত্রী) ডিভোর্স দিবো।’ ওই রাতে সামিরা ওই বাসায় ছিল। পরদিন প্রতিবেশি একজন ফোন করে জানালো, সালমান সাহেব খুব অসুস্থ।’ গিয়ে দেখা গেল, সালমান পৃথিবীতে নেই। সে নাকি আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন, আত্মহত্যাই যদি করে থাকে, প্রথমেই প্ররোচিত করার দায়ে সামিরাকে কেনো আটক করা হয়নি। যাহোক, আসলে সালমানকে সামিরা চক্র ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে। সালমান যে ব্রান্ডের সিগারেট খেতো, সেদিন তার রুমে অন্য ব্রান্ডের সিগারেটের টুকরো পাওয়া যায়। যে দড়িতে ফাঁস লাগানো হয়েছে বলা হচ্ছে, ওটা একটি মোটা রশি, অথচ সালমানের গলাতে চিকন একটি দাগ। আমার ধারণা, ওটা জব্দকৃত টেবিল ফ্যানের তারের দাগ, যা দিয়ে সালমানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। সালমান হত্যার রহস্য উদঘাটন না হওয়ার বড় কারণ হচ্ছে, সালমান হত্যা নিয়ে অনেক লোক রাতারাতি ধনী হয়ে গেছে।
* সালমান শাহ হত্যা মামলাটি কোনো অবস্থায় আছে ?
একজন মামা হিসেবে নই। সালমান শাহ যেহেতু এখন রাষ্ট্রীয় ব্যক্তি। তাই রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে আমার দাবি, আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা দিয়ে ঘটনাটি আবার তদন্ত করানো হোক। আর বর্তমানে এই হত্যা মামলাটি বিচারাধীন আছে।
* সালমান শাহ ভক্তদের উদ্দেশে কিছু বলার আছে ?
কম সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রে সালমান ভক্তদের হৃদয় জয় করেছে। তার ভক্তরাই আজ স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কেউ কেউ দক্ষ আইনজীবী হয়ে বের হয়েছেন, ভবিষ্যতে তারাই সালমান হত্যা নিয়ে লড়বেন। ভক্তরা একদিন বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করবেন-এটাই প্রত্যাশা।

Share





Related News

Comments are Closed