সুনামগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, ৮০ ভাগ ফসল কাটা সম্পন্ন
আল হেলাল, সুনামগঞ্জ থেকে: ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জ জেলায় চলতি মৌসুমে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন কৃষকরা। আবাদকৃত জমি থেকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ৪ হাজার ৩ শত ৮০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ ফসল কাটা সম্পন্ন হয়েছে। উৎপাদিত ফসলের মধ্যে মোট সাড়ে ৩ তিন হাজার কোটি টাকার ধান ক্রয় করে নিয়েছে খাদ্য বিভাগ।
সুনামগঞ্জে বোরো ফসলের ভাল এবং বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে খুশীর যেন অন্ত নেই। সর্বত্র ধুম পড়েছে ধান কাটার। কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিন হওয়ায় দ্রুত ধান কাটা হচ্ছে হাওরে। ধান মাড়াইয়ের জন্য খলায় খলায় চলছে বোরো উৎসব। কৃষান কৃষানীরা হাওরে হাওরে স্বপ্নে বিভোর হয়ে আনন্দে নাচছেন। গেলবারও তারা বাম্পার ফসল ঘরে তুলেছেন। ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নে বিভোর গোটা কৃষক সমাজ।
হাওর ঘুরে জানা গেছে গ্রামে লোকজনের দেখা মিলেনা। জরুরি কাজেও ফোনে পাওয়া যায়না কাউকে। সবই ফসল কাটা, ধান মাড়াই ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত। অনেকে মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতিসহ সারা বছর সানন্দে জীবন অতিবাহিত করার স্বপ্ন দেখছেন। নারীরা অভিভাবকের সাথে ধান তুলার কাজে করছেন সহায়তা। শিশু কিশোররাও খড়ে দোল খাচ্ছে।
দেখার হাওরের কৃষক মনসুর আহমদ বলেন, এবার ২০ কেদার জমি রোপন করেছি। ধান কাটা ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি কেদারে ২৫ মন করে ধান মিলছে। করচার হাওরে কথা হয় কৃষক শফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, আবহাওয়া ভাল হওয়ায় ফসল ঘরে তুলতে পারছি। এবার উগার ধানে ভরে যাবে। শনির হাওরের কৃষক আব্দুল জাহান জানান, কয়েক হাল জমিতে ভালো ফলন হয়েছে। ধান কাটা ৭৫ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ সময় পেলে ছটাক পরিমাণ ধানও থাকবেনা হাওরে।
হালির হাওরের কৃষক দেবেশ দাস বলেন, এভাবে ফলন হলে যাদের বেশি জমি আছে তাদের ইউরোপে যাওয়ার দরকার নাই। আমি এ বছর ১০০০ মন ধান আশা করছি। আশা করি ধানের রেইটও বেশি পাব।
ছায়ার হাওরের কৃষক হাশিম উল্লাহ বলেন,আমরা গৃহস্থ পরিবার। হাওরে ৫ হাল জমি আছে। বছর ভালা হলে আমরাই ধনী। বছর খারাপ হলে ফকির। এবার ধানের বাম্পার ফলন দেখে খুশি লাগছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যা মোছাঃ তানজিনা বেগম রোখশানা বলেন, এবারের বোরো ফসলের বাম্পার ফলনে কৃষক কৃষানী ছাড়াও ভূমিহীন পরিবারের মাঝেও একই আনন্দ বিরাজ করছে। কারণ যাদের জমি নেই তারা অন্যের জমির ধান কেটে দিয়ে ও মাড়াই কাজে সহযোগীতা করে ধানের মালিক হয়েছেন।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন,আমার নিজের কোন কৃষিজমি নেই। আমার বোনজামাই পরের জমি বর্গাচাষ করে শতমন ধান উৎপাদন করেছেন। আমি স্বপরিবারে তাদের ধান মাড়াই ও ধান কাটায় সহযোগীতা করে বেশ কয়েকমন ধানের মালিক হয়েছি।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন কৃষকরা। যেখান থেকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার ২০২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হবে। উৎপাদিত ধানের বাজার মূল্য ৪ হাজার ৩শত ৮০ কোটি টাকা। তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলায় শতকরা ৮০ ভাগ ফসল কাটা সম্পন্ন হয়েছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে আগামী এক সপ্তাহে শতভাগ ধান কাটা সুসম্পন্ন হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাইনুল হক ভূইয়া বলেন, উৎপাদিত ফসলের মধ্যে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ধান ক্রয় করেছি আমরা। এবার প্রত্যেকটি গুদামে নির্ভেজাল ধান উঠেছে। কোথায়ও ছোচা বা আধাপাকা ধানের অস্তিত্ব মিলেনি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন,আমরা হাওরে আছি। হাওর ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমরা জেলা প্রশাসন চাই এক ছটাক পরিমাণ ধানও যেন বন্যা বা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে না যায়। সেজন্য কৃষকদের পাশে থেকে ধান কেটে ও মাড়াই দিয়ে তাদেরকে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ শেষ পর্যন্ত ধানের এই বাম্পার ফলন যেমন অব্যাহত থাকবে তেমনি ফসল শতভাগ ঘরে তোলার পর আমরা ক্ষান্ত হবো।
Related News
ঈশ্বরগঞ্জে কৃষি বিপ্লবের নতুন ধারা, আউস চাষে ব্যতিক্রম সাফল্য
Manual7 Ad Code হোছাইন মুহাম্মদ তারেক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ঈশ্বরগঞ্জে কৃষি খাতে যুক্ত হয়েছে একRead More
পঞ্চগড়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমন চারা রোপন করতে পারছেন না চাষিরা
Manual3 Ad Code মো. সফিকুল আলম দোলন, পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি: এখন ভরা বর্ষা মৌসুম ।দেশেরRead More



Comments are Closed