ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো সিলেট

নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেট ও এর আশপাশের এলাকায় মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে এই ভূকম্পন অনুভূত হয়।
সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, সকাল ১০ টা ৪৬ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৫। এই ভূমিকম্প ১৫ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল।এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরবর্তি গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে।।
এদিকে, ভূমিকম্পের কারণে সিলেটের কোথাও কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। সকালে সিলেটে অবিরাম বৃষ্টির মধ্যে এ ভূমিকম্প যখন অনুভূত হয় তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কদেখা দেয়। অনেকেই আতংকে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন।
সিলেট নগরীর বারুতখানা এলাকার বহুতল ভবনের বাসিন্দা কামরুজ্জামান জানান, বাসার সবাই ঘুমের মধ্যে ছিলাম। ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সাথে সাথে ভবনটি কেঁপে ওঠে। তবে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
দক্ষিণসুরমার বারখলার বাসিন্দা মতিউর রহমান জানান, ভূমিকম্প হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার বাসাটি কেঁপে ওঠে। অবিরাম বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ এই ভূমিকম্প। সিলেটে একদিকে বন্যার শঙ্কা অপরদিকে ভূমিকম্প। আল্লাহ জানেন। কি আছে আমাদের কপালে।
টানা বর্ষণ ও বন্যার শংকার মাঝে শুক্রবার সকালের ভূমিকম্প সিলেটবাসীর মাঝে ভীতি জাগিয়েছে।
ভূমিকম্প–গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, সিলেটের সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চলে টেকটোনিক কাঠামোর কারণেই সেখানে একাধিক চ্যুতি রয়েছে। এর মধ্যে ডাউকি চ্যুতি খুব বড়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় চ্যুতিগুলোর এটি একটি। এর বিস্তৃতি পূর্ব–পশ্চিমে ৩০০ কিলোমিটার। ডাউকির নাম হয়েছে মেঘালয়ের একটি শহরের নাম থেকে। এই চ্যুতি বাংলাদেশের দিকে চলে এসেছে। এটি ভূমিকম্পের একটি বড় উৎস। এ চ্যুতিতে ১৮৯৭ সালে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়। এটি ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। সেটি ছিল এক ভয়াবহ ভূমিকম্প। এতে মেঘালয় এলাকা একেবারে পুরো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, আজ যেখানে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল, সেখানে ছোটখাটো ভূমিকম্পের রেকর্ড আছে। এই ভূমিকম্প বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে প্লেট বাউন্ডারির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত একটি সক্রিয় চ্যুতি অঞ্চলে সংঘটিত হয়। সক্রিয় এ চ্যুতি সিলেটের পূর্বাঞ্চল থেকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর বিস্তৃতি প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। ১৯১৮ সালের শ্রীমঙ্গলের ভূমিকম্পটি আজকের ভূমিকম্পের কাছাকাছি রশিদপুর চ্যুতিতে সংঘটিত হয়েছিল, যার মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬।
তিনি বলেন, ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় অঞ্চলে ছোট ছোট ভূমিকম্প হওয়ার অর্থ এখানকার ভূ–অভ্যন্তরে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে মাঝেমধ্যে।
এদিকে, আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৪৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে আমেরিকান ভূ-তাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে ভূমিকম্পটি ছিল ৫ মাত্রার ও এর উৎপত্তিস্থল সিলেট শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। ভূমিকম্পটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়েছে। ভূমিকম্পটির ভৌগলিক অবস্থান ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৯২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।’
তিনি আরও লেখেন, ‘সিলেট শহরের মানুষদের আগামী ২৪ ঘণ্টা সতর্ক থাকার অনুরোধ করবো। ৫ মাত্রার ভূমিকম্প অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টা ছোট-ছোট আরও ২-১টি ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে ভূমিকম্পগুলো প্রথম ভূমিকম্পের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সৃষ্টি হয়ে থাকে।’
তবে মোস্তফা কামাল পলাশের এমন মন্তব্যে দ্বিমত পোষণ করেছেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন।
সজিব বলেন, ‘পৃথিবীর কেউই যেখানে ভূমিকম্পের আগাম বার্তা দিতে পারেন না। সেখানে আমাদের দেশের কিছু গবেষক ও আবহাওয়াবিদ আগাম বলছেন আরও ভূমিকম্প হবে। এটা বিষ্ময়কর।’
Related News

সিলেটে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূ-কম্পন
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: সিলেটে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছে। বুধবার (৫ মার্চ) বেলাRead More

ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল রংপুর
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: রংপুরসহ আশপাশের বেশ কিছু এলাকা ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টাRead More
Comments are Closed