Main Menu

সিলেটে ছোটমনি নিবাসে শিশু হত্যা, দায় স্বীকার আয়া’র

বৈশাখী নিউজ ২৪ ডটকম: সিলেট নগরীর বাগবাড়িস্থ সমাজ সেবা অধিদপ্তর পরিচালিত সরকারি ছোটমনি নিবাসের দুই মাস ১১ দিন বয়সী শিশু নাবিল আহমদকে হত্যাকারী আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

শনিবার (১৪ আগস্ট) বিকালে সিলেট মহানগর আদালতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমানের আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ।

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মাহবুব আলম মণ্ডল বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আয়া সুলতানা ফেরদৌসীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। শনিবার দুপুরে আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড ও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ বলেন, শনিবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত আয়া সুলতানা ফেরদৌসীকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। রিমান্ড এবং ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দুটোর জন্য আমরা আদালতে আবেদন করি। তবে আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়াতে রিমান্ড লাগেনি। তবে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কি বলেছেন তা এখনো জানা যায়নি।

এদিকে নাবিলকে হত্যার পর ঘটনা গোপন রাখেন ছোটমণি নিবাসের দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ কারণে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২২ জুলাই রাত ১১টার দিকে ছোটমণি নিবাসে মাত্র ২ মাস ১১ দিন বয়সী শিশু নাবিল আহমদ কান্নাকাটি শুরু করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকা। বিরক্ত হয়ে একপর্যায়ে নাবিলকে বিছানা থেকে তুলে সজোরে ছুড়ে ফেলেন তিনি। এ সময় বিছানার স্টিলের রেলিংয়ে বাড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যায় শিশুটি। প্রচণ্ড আঘাতের ফলে তৎক্ষণাৎ জ্ঞান হারায়। এর পর তার মুখের ওপর বালিশ চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন আয়া। তার পর আলামত নষ্টের চেষ্টা করেন তিনি। তাকে সহযোগিতা করেন ছোটমণি নিবাসের কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

গ্রেপ্তার আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকার (৪৫) গ্রামের বাড়ি নারানগঞ্জের সুনারগাঁও এলাকায়।

ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার লক্ষে ২৪ জুলাই কোতোয়ালি মডেল থানায় অপমৃত্যু মামলা (নম্বর-৪৫) দায়ের করা হয়। ময়নাতদন্তের পর নাবিলের মরদেহ দাফন করা হয়। নাবিল হত্যার বিষয়টি আড়ালেই থেকে যায়।

তবে গত ১২ আগস্ট রাতে কোতোয়ালি থানা পরিদর্শনে যান সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি উত্তর) আজবাহার আলী শেখ। এ সময় শিশু নাবিলের অপমৃত্যু মামলাটি তার দৃষ্টিগোচর হয়। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় রাত ১১টায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাহবুবসহ পুলিশ ফোর্স নিয়ে বাগবাড়ীর ছোটমণি নিবাসে ছুটে যান তিনি।

সেখানকার সিসি ক্যামেরায় শিশু নাবিল হত্যার পুরো ঘটনাটি রেকর্ড হয়েছিল। সিসি টিভি ফুটেজে সুলতানা কর্তৃক নাবিলকে ছুড়ে ফেলা এবং বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করার দৃশ্য দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকাকে আটক করার নির্দেশ দেন আজবাহার আলী শেখ। পরে সুলতানাকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম ফরহাদ জানান, গত ১২ জুন গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ ওই শিশুটিকে বাগবাড়ির ছোটমণি নিবাসে দিয়েছিল। এক ভবঘুরে নারীর জন্ম দেওয়া ওই শিশুর নাম রাখা হয়েছিল নাবিল আহমদ। ছোটমণি নিবাসের আয়া সুলতানা ফেরদৌসী ওই শিশুর পরিচর্যার দায়িত্বে ছিলেন। গত ২৩ জুলাই সকালে শিশুটিকে তার বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

ওসি জানান, গত ১২ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে এসএমপির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা কোতোয়ালি থানায় বার্ষিক পরিদর্শনে যান। এ সময় বিভিন্ন মামলা পর্যালোচনাকালে ওই শিশুর ‘অপমৃত্যু’ মামলাটিও খতিয়ে দেখা হয়। সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ গিয়ে ছোটমণি নিবাসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তাকে হত্যার প্রমাণ পেয়েছে।

ওসি জানান, আটক আয়াকে আসামি করে এ ব্যাপারে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ওসি আরো জানান, দুইটি বিষয়কে সামনে রেখে মামলা তদন্ত করা হবে। প্রথমত হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তীতে এ ঘটনা ধামাচাপায় কেউ জড়িত কি-না তা দেখা হবে। যারাই জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এ ব্যাপারে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সিলেটের উপপরিচালক নিবাস দাশ বলেন, ‘ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার কোনো চেষ্টা হয়নি। শিশুটি মারা যাওয়ার পরই আয়া সুলতানা ফেরদৌসীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা করা হয় এবং পুলিশকে দেওয়ার জন্য কক্ষের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল’।

তিনি বলেন, তদন্তে যারাই দোষী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সমাজসেবা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক সন্দীপ কুমার সিংহ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে তদন্ত করেছি বিষয়টি। সেখানে তার (আয়ার) সংশ্লিষ্টতা থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকায় তদন্ত প্রতিবেদনও পাঠিয়েছি।

Share





Related News

Comments are Closed