Main Menu

সিলেটে বৃস্টি উপেক্ষা করে পর্যটকদের ঢল

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: ঈদের ছুটিতে সিলেটে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। পর্যটকদের কাছে সিলেটের সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্থান গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত জাফলং, ফাটাছড়া মায়া ঝর্ণা, পান্তুমাই, লক্ষণছড়া, বিছনাকান্দি, রাতারগুলের মতো পর্যটন স্পট।

ঈদের দিন বিকেল থেকে তাই এসব পর্যটন স্পট পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে সমবেত হয়েছেন হাজার হাজার পর্যটক।

উত্তর সিলেটের সবকটি সড়কই ভাঙ্গাচোরা। খনাখন্দে ভরা। সড়কের বেহাল দশার কারণে সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটক দর্শনার্থীরা পড়েন চরম বিপাকে। তবু পর্যটকদের ঢল কমেনি।

সরেজমিনে সোমবার সকাল ১০টায় জাফলং বল্লাঘাট পিকনিক স্পট পরিদর্শনকালে কথা হয় ভ্রমণে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের সাথে। তারা জানান, উত্তর সিলেটের নয়নাভিরাম জাফলং, বিছনাকান্দি এবং একমাত্র মিটাপানির সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল ঘুরে দেখতেই সড়কের কষ্ট সহ্য করে গোয়াইনঘাটে ভিড় করেছেন তারা।।

নারায়নগঞ্জের পাগলা থেকে আসা চাকুরীজীবী আজিজুর রহমান জানান, পরিবার-পরিজনসহ দশ সদস্য নিয়ে জাফলং এসেছি। এখানকার দিগন্তজোড়া পাহাড়, ঝর্ণা যে কারোরই মন ভুলাবে।

ফয়সাল চৌধুরী নামের ঢাকার জুরাইন এলাকা থেকে আসা এক পর্যটক জানান, দিগন্তজোড়া সবুজে বেষ্টিত পাহাড়, পিয়াইনের স্বচ্ছ জলারাশি, নুড়িপাথর, খাসিয়া সম্প্রদায়ের বাড়ী-ঘর, চা বাগান সবকিছুই যেন জাফলংকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, সড়ক যোগযোগের করুণ দশায় কিছুটা ভোগান্তির শিকার হয়েছি, তবুও এখানকার প্রকৃতির অমিয়বন্ধনে সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গেছি।

জাফলং জিরো পয়েন্ট এলাকায় কথা হয় আহমেদ ইমতিয়াজ ও রওশনারা নামের বগুড়া থেকে আসা দম্পতির সাথে। তারা জানান, এখানকার পরিবেশ-প্রকৃতি এবং রূপলাবণ্যতা পর্যটকদের প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে। মানুষ আনন্দ পেতে এখানে ছুটে আসে। আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি যে, এখানে পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক বিভিন্ন অবকাঠামো স্থাপনা তৈরি করে এবং সিলেট থেকে এসব স্পটে আসার সড়কগুলো অতিদ্রুত মেরামত করে যোগাযোগ উপযোগী করে পর্যটক এবং যাত্রী ভোগান্তি কমাতে।

এবারের ঈদে গোয়াইনঘাটে অন্যান্য ঈদের চেয়ে পর্যটক দর্শনার্থীর সমাগম বেড়েছে। জাফলং জিরো পয়েন্ট এলাকার পাশেই অবস্থিত ভারতীয় ফাটাছড়া মায়া ঝর্ণা। সেখানে ঘুরতে আসা এক শিক্ষার্থী বলেন, জাফলংয়ে শুধু পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করে সরকার বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারেন। এজন্য সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে।

রাতারগুলের সোয়াম্প ফরেস্টেও এবারের ঈদে পর্যটক দর্শণার্থীর উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। বেলা ৩টায় রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট টাওয়ারের কাছে কথা হয় মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে আসা পর্যটক আলী হোসেন এবং আহমেদ আকবরের সাথে। তারা জানান, ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে সবুজ অরণ্যঘেরা গহীন বনে ভেসে বেড়ানোর এ দৃশ্য সুন্দরবনকেই কাছে নিয়ে আসে।

বিছনাকান্দি থেকে ঘুরে এসে কেরাণীগঞ্জের পর্যটক সোলায়মান আহমেদ জানান, ঈদের আনন্দ পরিবার-পরিজনদের নিয়ে ভাগাভাগি করতেই সিলেটে আসা। আর সিলেটে আসা মানেই জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল ঘুরে বেড়ানো। সিলেটের এই পর্যটন স্পটগুলো রক্ষণাবেক্ষণ এবং পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করলে সরকার প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করার পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

গোয়াইনঘাট বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার সম্পাদক মোশাহিদ আলী জানান, এবারের ঈদে গোয়াইনঘাটের পর্যটন স্পটে ঘুরতে আসা পর্যটক দর্শণার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টসহ সবকটি পিকনিক স্পটে এবার উপচে পড়া ভ্রমণপ্রিয় মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে।

গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুলসহ সব’কটি পর্যটন স্পটে ঘুরতে আসা পর্যটক দর্শণার্থীদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসন তরফে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জাফলংসহ প্রায় সবকটি স্পটেই তথ্যকেন্দ্র স্থাপনসহ পর্যটকদের দিকনির্দেশনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা রয়েছে।

গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ দেলওয়ার হোসেন জানান, জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুলসহ গোয়াইনঘাটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শণার্থীর আগমণ-প্রস্থান নিরাপদ এবং নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশের বিশেষ টিম মাঠে রয়েছে।

Share





Related News

Comments are Closed