সিলেটে বাড়ছে সবকটি নদীর পানি, নিখোঁজ ২
বৈশাখী নিউজ ২৪ ডটকম: গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও ওপার থেকে নেমে আসার ঢলে সিলেটের সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, শনিবার বিকাল ৩টায় সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা বিপদসীমার ১৫৭ সেন্টিমিটার, সিলেটে সুরমা ৬৫ সেন্টিমিটার, শেওলায় কুশিয়ারা বিপদসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার, আমলসীদে কুশিয়ারা বিপদসীমার ১৩৯ সেন্টিমিটার, শেরপুরে কুশিয়ারা বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার এবং সারিঘাটে সারি নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শহীদুজ্জামান সরকার
জানান, সিলেটের সব কটি নদীর পানি শুক্রবারের চেয়ে শনিবার আরো বেশী বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
বন্যার পানিতে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও সদর উপজেলার নিচু এলাকার রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি না থামায় শনিবারও প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন উপজেলার নতুন নতুন এলাকা।
এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত তিন লাখেরও বেশি মানুষ। এছাড়া ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
এদিকে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও ধলাই এবং গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি ও জাফলং পাথর কোয়ারির সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব পাথর কোয়ারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন জানান, টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদের পানি বাড়ছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি ও অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে। উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ কোয়ারিতে পাথর সংগ্রহ করতে গিয়ে শুক্রবার রাতে বন্যার পানিতে নৌকাডুবিতে হেলাল উদ্দিন নামের এক পাথর শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে। সে উপজেলার মধ্যম রাজনগর এলাকার মৃত হাজী নুরুল ইসলামের পুত্র। তার সন্ধানে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি তাজুল ইসলাম।
এদিকে, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা দেখা দেওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কায় ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। পর্যটকদের সেখানে যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজেন ব্যানার্জী জানান, পর্যটক ও স্থানীয়দের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গোয়াইনঘাট উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট ও সবকটি হাওর তলিয়ে গেছে। পিয়াইন ও সারী নদী দিয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার পূর্ব জাফলং, আলীরগাঁও, রস্তমপুর, ডৌবাড়ী, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের প্রায় ৯৫ ভাগ গ্রামের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর পানিতে প্লাবিত হয়ে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বাড়ী ঘর প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি গোচারণ ভূমি পানি বন্ধী হওয়ায় গো-খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ডৌবাড়ী হাকুর বাজার কাপনা নদীর উপর নির্মিত হাকুর বাজার ব্রীজের সাইড ভেঙে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বন্ধ রয়েছে। সারী-গোয়াইন ও সালুটিকর-গোয়াইনঘাট রাস্তা তলিয়ে গিয়ে উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নতুন করে আরো প্রায় ৩ শত হেক্টর জমির ফসল ও বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত থাকলে এর পরিমাণ আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কৃষি অফিসের তথ্য মতে এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে পানিতে নিমজ্জিত জমির ফসল ও বীজতলার পরিমাণ ১ হাজার হেক্টর।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে কিছু জমির ফসল ও বীজতলা ডুবে গেছে। বিশেষ করে বোনা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
রস্তুমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন জানান, আমার এলাকার প্রায় ১০০টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। বিশেষ করে আমার ইউনিয়নে অবস্থিত বিছনাকান্দি কোয়ারী বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। এলাকার জনসাধারণ চরম দুর্ভোগে রয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আফিয়া বেগম জানান, আমি ইতোমধ্যে আলীরগাঁও, পশ্চিমজাফলং ও লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের বেশ ক’টি বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং সাথে সাথে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। মানুষ চরম দূর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। রাস্তা-ঘাট পনিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। এতে গ্রামের মানুষ পার্শ¦বর্তী হাট-বাজারে যাতায়ত করতে পারছে না।
এদিকে পাহাড়ি ঢলে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে নদীতে ডুবে এক যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ হোসেন মিয়া (২৮) উপজেলার নয়াগাঙের পাড় গ্রামের গণি মিয়ার ছেলে। গত বুধবার রাতে জাফলংয়ের নয়াবস্তি গ্রাম সংলগ্ন পিয়াইন নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
গোয়াইনঘাট থানার ওসি (তদন্ত) হিল্লোল রায় জানান, বিষয়টি আমরা শুনেছি। দিনভর বৃষ্টি আর নদীতে প্রবল স্রোত থাকার কারণে এখনও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে তার সন্ধানে থানা পুলিশসহ এলাকার লোকজনও সচেষ্ট রয়েছে।
Related News
বিশ্বনাথে ১২০ বস্তা ভারতীয় চিনিসহ ৫জন আটক
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: সিলেটের বিশ্বনাথে প্রায় ৬ হাজার কেজি ভারতীয় চিনি ও একটি ট্রাকসহ পাঁচRead More
বিশ্বনাথে ভূয়া পিতৃপরিচয় দিয়ে বৃদ্ধের সঙ্গে প্রতারণা, প্রতীকার দাবি
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: সিলেটের বিশ্বনাথে জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে পিতৃপরিচয় দিয়ে ৬৫ বছরের বৃদ্ধেরRead More
Comments are Closed