Main Menu

এক বছর ধরে দিনে ১টি পাউরুটি খেতে দিত

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: লিবিয়ায় ভূমধ্যসাগরের তীরে ‘গেম ঘর’ নামক বন্দিশালায় এখনো অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি তরুণ আটকা রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভূমধ্যসাগরের উত্তাল সমুদ্রে অচল বোট থেকে বেঁচে ফিরে আসা সিলেটের রুবেল ও ছাইদুল ইসলাম জাবের।

তাদের দেওয়া তথ্যমতে, লিবিয়ায় দালাল পারভেজের গেইম ঘরে অভিবাসন প্রত্যাশীদের অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। গেইম ঘরে এখনো ৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। এদের সকলেই সিলেটের বাসিন্দা। এদের যেকোনো মুহূর্তে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সাগরে ভাসিয়ে দিতে পারে।

সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাও ইউনিয়নের ঘোপাল গ্রামের মো. রুবেল আহমদ জানান, তিন দিন সাগরে ভেসে খুব কাছ থেকে দেখেছেন মৃত্যুকে। লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে দুটি বোটে যাত্রাকালে রুবেলদের নৌকা অচল হয়ে গেলেও ভাগ্যক্রমে বোট দুটির সবাই বেঁচে যান।

রুবেল জানান, এর আগে লিবিয়ায় অন্ধকার ঘরে তাদের এক বছর আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। সারা দিনে একটি পাউরুটি দেওয়া হতো। খাবারের জন্য পানির সাথে মিশিয়ে পেট্রোল দেওয়া হতো। যাতে তাদের ওজন কমে এবং একটি নৌকায় বেশি যাত্রী সংকুলান হয়।

গত ৯ মে এক ঘণ্টার ব্যবধানে লিবিয়া থেকে দুটি নৌকা ইতালির উদ্দেশে সাগরে যাত্রা করে। কিছুদূর গিয়ে অপর নৌকাটি ডুবে গেলে সাগরে প্রাণ হারান সব যাত্রী। তিউনিসিয়া সীমান্তে যাওয়ার পর রুবেলদের নৌকাটিও নষ্ট হয়ে যায়। তারপর টানা তিন দিন সাগরে ভেসে থাকেন নৌকার নারী শিশুসহ ৫৭ যাত্রী। একপর্যায়ে একটি তেলবাহী জাহাজ তাদের রাবারের বোটের সন্ধান পায়।

তেলবাহী জাহাজের নাবিকরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে এলেও জাহাজে তুলতে রাজি হননি। এক রাত রাবারের বোটে ভাসমান থাকতে হয় তাদের। অবশ্য তিউনিসিয়ার তেলবাহী জাহাজের নাবিকরা লাইট জ্বালিয়ে আলো দিয়ে তাদের সাহায্য করেছিলেন। পরে তারা মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে তিউনিসিয়া কোস্ট গার্ডের কাছে পাঠান। এরপরও সাড়া দেয়নি কোস্ট গার্ড। পরে জেলেরা এগিয়ে এসে উদ্ধার করে তিউনিশিয়ার কোস্ট গার্ডের কাছে হাস্তান্তর করেন।

রুবেল জানান, ভাগ্য বদলের আশায় দালালের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। উদ্দেশ্য অসুস্থ বাবা-মা, স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া চার বোন আর ভাইয়ের সংসারের হাল ধরা। সেই লক্ষ্যে গত রমজানে বিমানে করে বাংলাদেশ থেকে দুবাই-মিশর হয়ে লিবিয়া পৌঁছান।

রুবেলের মতে, কথা রাখেননি দালাল পারভেজ। কথা ছিল লিবিয়া থেকে জাহাজে করে তাদেরকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে ইতালি। কিন্তু লিবিয়ায় নিয়ে অন্ধকার ঘরে আটকে রাখা হয় তাদেরকে। সেখানে চলে অমানবিক নির্যাতন। খেয়ে না খেয়ে এক বছর কাটানোর পর গত ৯ মে তুলে দেওয়া হয় ভূ-মধ্যসাগরের রাবারের তৈরি বোটে। ২৫ জন ধারণ ক্ষমতার নৌকায় তোলা হয় ৫৭ জনকে।

মাছ ধরার জাহাজের পরিবর্তে রাবারের নৌকা দেখে উঠতে চাননি রুবেল। পারভেজের উপস্থিতিতে কয়েকজন লিবিয়ান তার মাথায় পিস্তল ধরেন। এরপর বাধ্য হয়েই তিনি রাবারের নৌকায় উঠেন। ঐ নৌকায় ৫৭ যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে সোমালিয়ার বাসিন্দা ছয় জন নারী ও ছয় জন শিশুও ছিল।

রুবেল জানান, লিবিয়া বিমানবন্দরে নামার পর তাদেরকে সশস্ত্র কিছু সেনা সদস্য নিজেদের গাড়িতে শুইয়ে বস্তা দিয়ে মুড়িয়ে পৌঁছে দেয় দালালের কাছে। সেই থেকে তারা দালাল পারভেজের নিয়ন্ত্রণে গেইম ঘরে ছিলেন।

রুবেল বলেন, ‘ইতালি পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাসে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বৈরাগীবাজার কাতলীপড়া গ্রামের রফিক মিয়াকে ৯ লাখ টাকা দেই বাবা-মার কাছ থেকে নিয়ে। সিলেট-সুনমাগঞ্জ সড়কের পাশে চার শতক জমি বিক্রি করে ঐ টাকা তুলে দিয়েছিলেন দালালের হাতে। এখন তার পরিবার পুরোপুরি নিঃস্ব।

এদিকে তিউনেসিয়া থেকে দেশে ফেরত সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাগাওয়ের ছাইদুল ইসলাম জাবেরও রুবেলের সাথে একই বোটে ছিলেন এবং এর আগে একই নির্যাতনের শিকার হন। বিশ্বনাথ উপজেলার বৈরাগীবাজার কাতলীপড়া গ্রামের বাসিন্দা রফিক মিয়ার ছেলে পারভেজের মাধ্যমেই ইতালি যেতে বোটে উঠেছিলেন তিনি। এর আগে গেইম ঘরে নির্যাতনের শিকার হন। ছাইদুল ইসলাম ভবিষ্যতে আর কোনো তরুণকে দালালদের খপ্পরে পড়ে এই পথে পাড়ি না দেওয়ার আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, রুবেল ও ছাইদুল গত ২১ মে মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৫০মিনিটে তিউনিশিয়া থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর বিভিন্ন বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার রাত ২টায় বাড়ি ফেরেন তারা।

Share





Related News

Comments are Closed