Main Menu

শিক্ষার মান ও শিক্ষকদের সম্মান-সম্মানী

স্বপন তালুকদার: প্রতিটি দেশ শিক্ষাকে শুধু গুরুত্বপূর্ণই মনে করে না, শিক্ষাকে অন্য সকল কিছু থেকে অধিক গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়াদির সমস্যা দ্রুত সমাধান করে থাকে। যাতে শিক্ষায় কোনোরূপ ব্যাঘাত না ঘটে। কারন শিক্ষা একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখে। অর্থনৈতিক, সামজিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক, মানবিক এসব ক্ষেত্রে উন্নয়ন শিক্ষার উন্নয়নের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এ সত্য অস্বীকার করার কোন জাতির পক্ষেই সম্ভব নয়। পৃথিবীর সব জাতির উন্নয়ন-অগ্রগতির ইতিহাস থেকে এ সত্য সুপ্রতিষ্টিত। অামরাও এ সত্য অস্বীকার করতে পারি না। কোন জাতিকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধন করতে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মৌলিক কিছু উপাদানের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া খুবই জরুরি।

শিক্ষাক্ষেত্রে মৌলিক বিষয় হচ্ছে, ভৌত অবকাঠামো, পাঠ্যপুস্তক এবং শিক্ষক। এই তিনটি উপাদানের মধ্যে মানসম্মত বা ভালো পাঠ্য পুস্তক ও ভালো শিক্ষকের কথাই বিশেষভাবে বলতে হয়। এই তিনটি বিষয়ের একটিকেও হেলাফেলার কোনো সুযোগ নেই। বিদ্যালয়ে ভালো বই শিক্ষকের অভাব কিছুটা পুরণ করতে সহায়ক। ছাত্রছাত্রী শিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই বই উন্নত মানের হলে অনেক কিছু নিজে নিজেই বই পড়ে বুঝে নিতে পারে শিক্ষার্থীরা বা বাবা মায়ের সাহায্য নিয়ে। এতে কোচিং ও গাইড বই নির্ভরতা কমবে। বই প্রনয়নে অামাদের অধিকাংশ অভিভাবক স্বল্প শিক্ষিত তা বিবেচনায় নেওয়াও উচিত। তাছাড়া পাঠ্য বই হওয়া উচিত অানন্দদায়ক। যা শিশু শিক্ষার্থীর অতিমাত্রায় বই পড়ায় প্রতি অাগ্রহ সৃষ্টি করে। বর্তমানে অামাদের বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বই গুলোতে তেমন বিষয়বস্তু সম্বলিত বিষয় সংখ্যা নিতান্তই কম। নৈতিক শিক্ষা, মানবিকতা ও সৃজনশীলতা বিকাশে শিশু সহায়ক হবে বই। যে সমস্ত বিষয়বস্তু শিশুকে বই টানবে। যদিও অামাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বিদেশী প্রক্রিয়াজত কাঠামোবদ্ধতার মোড়কে সৃজনশীল পদ্ধতির। অামাদের পাঠ্যপুস্তক কতটা শিশুর সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়ক, তাও বিবেচনার বিষয়। অামাদের প্রাথমিক লেভেলে যে সমস্ত বই পড়ানো হয়, সে সমস্ত বইয়ের বিষয়বস্তু পড়ে অনেক বিষয় অাছে যা শিক্ষার্থীর বই পড়ার প্রতি অাগ্রহ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়ে কোচিং ও গাইড বই নির্ভর করে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তাছাড়া এক শ্রেণির সুযোগ সন্ধানী লোক কোচিং বানিজ্য ও গাইড বই বানিজ্যের সুবিধাটা নিচ্ছে।

একটি উদাহরন দিলে বিষয়টি অারও পরিষ্কার হবে। চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ে বড় রাজা ছোট রাজা পাঠটি পড়ে শিশু শিক্ষার্থী কি বুঝে নিবে? এই বিষয়টি চতুর্থ শ্রেণি জন্য কতটা উপযোগী? এমন অারও অনেক বিষয় সন্বিবেশিত অাছে। তেমন প্রাথমিক বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়বস্তুতে বিষয়বস্তুর পুর্নাঙ্গ বিবরন নাই। শিক্ষার্থীকে কারো না কারো সাহায্যের বিশেষ প্রয়োজন। বছরে বছরে বই ও বিষয়বস্তু পরিবর্তনের রীতি তো অাছেই।

গত ২০ এপ্রিল-২০১৯ইং সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানলাম নতুন বই ও পাঠ্যক্রম অাগামী কয়েক বছরের মাঝে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বদলে যাচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম। যুগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই পরিবর্তন হচ্ছে সাত বছর পর। আধুনিক ও যুগোপযোগী হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যসূচি।পাল্টে যাচ্ছে সিলেবাস ও বই। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পরিবর্তন করা হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যক্রম। প্রথম ধাপে ২০২১ সালের জানুয়ারিতেই প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা হাতে পাবে সব বিষয়ের নতুন পাঠ্যক্রমের বই। ধাপে ধাপে সব শ্রেণির ছাত্রছাত্রীই নতুন পাঠ্যক্রমের লেখা পাবে। কমে যাবে বেশ কিছু বিষয়ের পাঠ্যবইয়ের টেক্সট ও কনটেক্সট। নতুন কিছু যুক্ত হবে আবার। শিক্ষাক্রম বদলানোর পুরো কাজটি শেষ হবে আগামী এক বছরে। ১০ এপ্রিল থেকে শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সত্যি একটি ভালো উদ্যোগ। যা খুবই দরকার ছিল। তবে অাশা করবো পাঠ্য বই তৈরিতে যেন কোনোরূপ তাড়াহুড়া না করা হয়। প্রাথমিকে যদি শিক্ষার্থীর ভিত্তি মজবুত না হয় পরিবর্তিতে সে ঝরে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তাই ভালো পাঠ্য বইয়ের বিকল্প নাই। তেমন বই শিক্ষার্থীদের উপহার দেওয়া খুব কঠিন কাজ নয়।

অামরা বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর মাঝে বই তুলে দেওয়ার মতো কঠিন কাজটা সুচারুপে করতে পারছি। তবে ভালো বই দিতে পারব না! একটু সময় নিয়ে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে অামরা খুব সহজেই ভালো বই উপহার দিতে পারি।

অার ভালো শিক্ষক তৈরি করা যদিও কঠিন কাজ তবে অসম্ভব নয়। মানসম্মত শিক্ষার জন্য ভালো শিক্ষক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এজন্য শিক্ষক নিয়োগ বিধি প্রনয়নের প্রয়োজন ছিল। অামাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনেক সমস্যা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শিক্ষক নিয়োগ শিক্ষাগত যোগ্যতার সমস্যা। ছেলেদের জন্য যোগ্যতা স্নাতক পাস, নতুন নিয়োগবিধিতে মহিলাদের জন্য এইচ এস সির পরিবর্তে স্নাতক করা হয়েছে নিয়োগবিধি-২০১৯ এ।শুধু মেধাবী ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়। শিক্ষকদের ধরে রাখার জন্য শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধাও একটি বিষয়। কিন্তু অামাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় যে দৃষ্টিকটু জায়গাটা তা হলো প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষকরাও বছরের পর বছর নানাবিদ বঞ্চনা নিয়ে অান্দোলন করতে দেখা যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকরা গত পাঁচ বছর যাবৎ তাঁদের বেতন বৈষম্য নিরসনের জন্য অান্দোলন করে অাসছেন। ২০০৫ ইং প্রধান শিক্ষক ও সহকারিদের মাঝে ব্যবধান ছিল একধাপের। ২০১৪ সালে এসে তা তিন গ্রেডে রূপ নেয়। বর্তমান নতুন বেতন কাঠামোতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকদের মাঝের বেতন বৈষম্য কমানোর পরিবর্তে অারও বাড়িয়ে দেয়। সহকারী শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষকদের মাঝে যেখানে কোনো বৈষম্য ছিল না, সেখানে তিনধাপের ব্যবধান সৃষ্টি হয়। যা স্বাভাবিক ভাবে হওয়ার কথা নয়। কারন ডিপার্টমেন্টে অন্যসব পদে এমনতর কোনো ব্যবধান নেই। যা সত্যি সহকারি শিক্ষকদের জন্য রীতিমত অপমানকর। এই বেতন বৈষম্য নিয়ে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের মাঝে চরম অসন্তোষ।

গত পাঁচ বছরে সহকারী শিক্ষকরা সরকারের বিভিন্ন মহলে দেখা সাক্ষাতসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করেছেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনশন করেন।তখনকার প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মহোদয় একমাসের মাঝে বৈষম্য নিরসনের অাশ্বাসে অনশন স্থগিত করা হয়। কিন্তু মাসের পর মাস গেলেও মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তরে শিক্ষক নেতৃবৃন্দদের নিয়ে কিছু বৈঠকের বেশি বেতন বৈষম্য নিরসনের কোনো কাজই হয়নি।পরবর্তিতে অাওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বেতন বৈষম্য নিরসন বিষয়টি অাসে। শিক্ষকরা অাশায় বুক বাঁধতে থাকেন এবার হয়তো বৈষম্য নিরসন হবে। কিন্তু দু:খের সহিত বলতে হয়, বেতন বৈষম্য নিরসনের নামে চলে বৈষম্য অারও বাড়িয়ে দেওয়ার হিসেব নিকেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ০৯/০৩/২০১৪ইং তারিখের ঘোষনায় প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণি তাই তাঁদের ১০ম গ্রেড প্রাপ্য। মহামান্য হাইকোর্ট প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রদানের পক্ষে রায় ঘোষনা করেন। তাই সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড যৌক্তিক দাবি। এই গ্রেড সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে অধিদপ্তর এবং সচিবালয় থেকে পত্রিকায় কখন সংবাদ হয় ১২তম গ্রেড এবং মাঝখানে ১১তম গ্রেড প্রদান করে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি করে দেওয়া হবে। অাবার মাননীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহোদয় বলছেন, ১১তম গ্রেড শিক্ষকদের দেওয়ার কাজ চলছে। যদিও পরবর্তিতে নতুন নিয়োগবিধি-২০১৯ এ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ রাখা হয়নি। কখনও ১২তম, কখন ১১তম গ্রেডের কাজ চলছে বলা হচ্ছে। তারই রেশ ধরে সারাদেশে পিটিঅাইসহ সকল সহকারী শিক্ষক সংগঠন গুলোর ব্যানারে অাবার ১৪মার্চ-২০১৯ মানববন্ধন এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। কিন্তু কেন শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনের নামে এমন বিভ্রান্তি এবং সময় ক্ষেপন? যে বেতন বৈষম্য সৃষ্টির কথা নয়, সেখানে তিনধাপের গ্রেড বৈষম্য নিয়ে কেন চলবে বিভ্রান্তিমুলক প্রচার?

সহকারী শিক্ষক শিক্ষার প্রকৃত কারিগর, তাদের এই বৈষম্য নজরে অাসার সাথে সাথে হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অথচ বছরের পর বছর শিক্ষকদের ভাবতে হয় কবে তারা তাদের কাঙ্খিত মর্যাদা ফিরে পাববেন! এ কি মানসম্মত শিক্ষার অন্তরায় নয়? অামাদের অামলা নির্ভর রাষ্ট্রে যতই শিক্ষকতা পেশাকে সম্মানজনক পেশা বলা হোক না কেন, বাস্তবতা কি তা প্রমান করে? আমাদের মতো আমলানির্ভর রাষ্ট্রে নষ্ট রাজনীতির দলীয় বলয়বৃত্তে বন্দি সরকার নিজ দৈন্যের কারণে আমলার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আর সেই সুযোগে কোনো কোনো সংকীর্ণ মানসিকতার আমলা নিজেদের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ভাবতে পছন্দ করেন। সব ক্ষেত্রে অধিকতর জ্ঞানী ভাবতেও আনন্দ পান। তাই অনেক সময় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকেও পরোয়া না করে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন। এতে মহা-অনর্থ বেঁধে গেলেও নানা রকম রক্ষাকবচের জোরে দোর্দণ্ড দাপটে থাকেন। সরকারি রাজনৈতিক সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গবেষণায় শিক্ষকরা স্বাভাবিক মূল্যায়ন বঞ্চিত হন। জয় হয় রাজনৈতিক পরিচয়ের। এসব কারণে প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকরা স্বাভাবিক মূল্যায়ন বঞ্চিত হচ্ছেন প্রায়শ। সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক পদে এই বেতন বৈষম্য অামলাতান্ত্রিক জটিলতারই ফসল। যা বহন করছেন সহকারী শিক্ষক।শিক্ষা ডিপার্টমেন্টের অন্য কোনো পদে এমন বেতন ব্যবধান নেই। প্রত্যকটি পদে উপর থেকে নিচে সকল পদের পরের গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন, এমন কি কোনো কোনো পদে একই গ্রেডে বেতন দেওয়া হচ্ছে। সহকারী শিক্ষক পদেও প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেডে বেতন নির্ধারিত ছিল। এমন তিন গ্রেডের বেতন বৈষম্য স্বাভাবিক কোনোভাবে তা হতেই পারে না, ভুল বা কালো কোনো অাচরনিক কারনে এমনটা হয়ে থাকবে। এই বেতন ব্যবধান কোনো স্বাভাবিক সুস্থ প্রক্রিয়ায় হয়নি। শুধু প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের বেলায় কেন এমন হয় বার বার।

বিগত ২০১৫ সালে পে-স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যখন গ্রেড অবনমন করা হয় তখন একটি বৈষম্য নিরসন কমিটি গঠিত হয়। কমিটি প্রধান ছিলেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী। তিনি মিডিয়ায় প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য বিশাল তাও এই কমিটি নিরসন করবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বৈষম্যের বিষয়টি সুরহা হলেও প্রাথমিক শিক্ষকদের বৈষম্য বহাল তবিয়তে থেকে যায় সরকারের সবুজ সংকেত থাকার পরও! কেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের এতো অবমূল্যায়ণ? প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক শিক্ষার প্রকৃত কারিগর।তাঁদের অবমূল্যায়ণ করে কি শিক্ষার প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব? প্রাথমিক শিক্ষকরা সরকার গঠণে কোনোরূপ প্রভাব রাখে না বলেই, অামলাতান্ত্রিক জটিলতার গ্যারাকলে পড়ে বৈষম্যের চাপ বহন করতে হয়? অন্য কারো বেলায় এমনভাবে কোনো বিষয় ঝুলিয়ে রাখা সম্ভব হবে? কোন দেশের শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি যদি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় না আসে, শিক্ষকদের দাবি আদায়ে যদি রাস্তায় থাকতে হয়, তাহলে কিভাবে মানসম্মত শিক্ষা সম্ভব?

আমরা মানব সম্পদ উন্নয়নের কথা বলি, স্বপ্ন দেখি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে। এই দুটার জন্যই প্রয়োজন মান সম্মত শিক্ষা। বিশেষ করে সর্বাগ্রে প্রয়োজন মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে উচ্চ শিক্ষাসহ সর্বস্তর মান সম্মত পর্যাপ্ত শিক্ষক দিতে পারব। পারব দেশের সর্বস্তরে মেধাবীদের পৌছে দিতে। সুতরাং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং শিক্ষকদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে দ্রুত এই বৈষম্য নিরসন হওয়া জরুরি। শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। শ্রেণিকক্ষের বাইরে ঠেলে দেওয়া বা বাইরে শিক্ষকদের অবস্থান কারো কাম্য নয়। অার শিক্ষকরা যদি সারা বছর বৈষম্যের শিকার হয়ে অান্দোলনে থাকেন তা জাতির জন্য ভয়ানক হুমকি স্বরূপ। এই পরিস্থিতি সার্বিক শিক্ষার জন্য এক অশনি সংকেত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এহেন অবস্থা জাতির জন্য কতটা ক্ষতিকর হবে তা ভেবে দেখা সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব। তাই এই অহেতুক বেতন বৈষম্য দ্রুত নিরসন হওয়া জরুরি।অামাদের দেশের ডিজিপি কয়েক বছর যাবৎ ৭ শতাংশের উপরে ধারাবাহিক ভাবে। কেন অামরা শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন স্কেল নির্ধারণ করতে পারবো না? ১১তম গ্রেডই সম্ভব যথাযথ বেতন বৈষম্য নিরসন। এতেই সকল শিক্ষকের অসন্তোষ দুর হবে। তবে কেন নয়? এর বাইরে কিছু করা হবে সাপ মেরে লেজে বিষ রেখে দেওয়ার মতোই। তাতে বরং অারও বিশাল বৈষম্যের শিকার হবেন সহকারী শিক্ষক। যা শিক্ষকদের জন্য বড়ই দু:খজনক।

লেখক: সহকারী শিক্ষক ও কলামিস্ট।

Share





Related News

Comments are Closed