Main Menu

বোরো চাষে কৃষকের চোখে নতুন স্বপ্ন

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক : সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার মাঠে মাঠে এখন চলছে কৃষকের বোরো ধান রোপনের ধুম। কাক ডাকা ভোরে শীতের হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে এ এলাকার কৃষকরা এখন কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। স্বপন্ বুনছেন আগামী দিনে ভালো ফসলের। সেচ প্রদান ও জমিতে ধানের চারা রোপনে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষক পরিবারের সদস্যরা।

বিগত বোরো ও আমন মওসুমে ধানের বাম্পার ফলন ঘরে তোলায় এবার বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। তাই কোনো ধরণের ক্লান্তিকে উপক্ষো করে মুখে নতুন স্বপ্নের হাসি নিয়ে মাঠে কাজ করছেন দিন করাত। তবে বেশ কয়েকটি হাওরে সেচ ও পানি সঙ্কটের কারণে বোরো আবাদ নিয়ে এখনো শঙ্কায় আছেন একাধিক কৃষক।

এদিকে ফলন ভালো পেতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পাচ্ছে না কোন পরামর্শ এমন অভিযোগও রয়েছে কৃষকদের।

জানা গেছে, চলতি বছর আবহাওয়া বোরো চাষের অনুকূলে থাকায় ও বীজতলা রোগ-বালাই না থাকায় চাষিরা বিগত বছর গুলোর চেয়ে বোরো চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলার হাওয়র অঞ্চলের কৃষি নির্বর পরিবার। ৩০ থেকে ৪০ দিন বয়সী চারা জমিতে রোপন করছেন। তবে মাঘ মাসের শেষের দিকে পুরোদমে বোরো রোপণ শুরু হবে বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন।

জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর জৈন্তাপুর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৭শ ১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৩২ হাজার ৯শ ৭০ মেট্রিক টন চাল। ইতিমধ্যে উপজেলার প্রায় ৩০ ভাগ জমিতে রোপণ করা হয়েছে বোরো ধান। পাহাড়ি ঢল ও আগাম বন্যার হাত থেকে ফলন রক্ষা করতে তীব্র শীত উপেক্ষা করে চাষাবাদে ব্যস্ত রয়েছে কৃষকরা।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে বোরো আবাদ মহাধুম। কুদাল, কলের লাঙল ও টেক্টর দিয়ে মাটি চাষ দিয়ে চারা রূপনের উপযোগি করা হচ্ছে বোরো ক্ষেত। দেওয়া হচ্ছে জমিতে সার ও সেচ। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় সেচ পাম্প থেকে পানি নিচ্ছেন চাষিরা। আবার কোথাও সারিবদ্ধভাবে রোপণ করা হচ্ছে ইরি ধানের চারা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের ব্যাপারে আশাবাদী তাঁরা। ধান উৎপাদনের খরচ বেড়ে গেলেও উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা।

জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামের কৃষক তাজ উদ্দিন মাসুক বলেন, ‘বোরো রোপণের জন্য জমি তৈরি করা হচ্ছে। তিনি চলতি মৌসুমে ২৭ একর জমিতে বোরো চাষাবাদ করবেন। এখন পর্যন্তু ২০ একর জমিতে বোরো রূপন সম্পন্ন করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবার ভালো ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আমাদের কোন প্রশিক্ষন ও পরামর্শ দেয়া হয় না।আমরা সরকারী ভাবে সার বা বীজ কোন কিছু পাই না। সার ও উন্নত জাতের বীজ পেলে আমি আরও উপকৃত হতে পারতাম।’

জৈন্তাপুর উপজেলার হেমু মাঝপাড়া গ্রামের কৃষক আইন উদ্দিন বলেন, ‘তিনি এ বছর ৩ একর জমিতে বোরো রূপণ করবেন। এ সপ্তাহের মধ্যে জমিতে চারা রূপণ কাজ সম্পন্ন হবে।’

জৈন্তাপুর উপজেলার দত্তপাড় গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘এ মৌসুমে তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানি পাওয়া যাচ্ছেনা। আমি এ বছর ৮ একর জমিতে বোরো রূপণ করবো। এখন পর্যন্তু ৬ একর জমিতে বোরো রূপন করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আমাদের প্রশিক্ষন ও পরামর্শ দিলে আরও উপকৃত হতে পারতাম। সরকার থেকে উন্নত জাতের বীজ পেলে আরও বেশী লাভবান হতে পারতাম।’

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বলেন, ‘জৈন্তাপুর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৭শ ১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৩২ হাজার ৯শ ৭০ মেট্রিক টন চাল। ইতিমধ্যে উপজেলার প্রায় ৫০ ভাগ জমিতে রোপণ করা হয়েছে বোরো ধান।আমরা পক্ষথেকে কৃষকদের জমি চাষের সঠিক ব্যবহার সহ নানান পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। কৃষকের মাঝে সার, বীজ দেয়ার ক্ষমতা আমার নাই। আমি শুধু কৃষকদের পরামর্শ দিতে পারবো।’

Share





Related News

Comments are Closed