Main Menu

জৈন্তার লাল শাপলার রাজ্যে পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত

মোঃ রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধিঃ সিলেটের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত পান-পানি-নারী খ্যাত জৈন্তাপুর উপজেলা। উপজেলায় প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ ভরপুর। সৌন্দর্যের লীলা ভূমি মেঘালয়ের পাদদেশ ঝর্ণা বেষ্টিত ডিবির হাওর লাল শাপলার বিল নামে পরিচিতি লাভ করে৷ ৪টি বিলে প্রায় ৯শত একর ভূমিতে প্রাকৃতিক ভাবে লাল শাপলার জন্ম। বিল গুলো হল ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট ও কেন্দ্রীবিল। শীতের আগমণের সাথে সাথে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়ে তুলে লাল শাপলার বিল সমুহ। যেন ফুলে ফুলে সাজানো আসমান জমিনে লাল গালিচায় বিছানার চাদর।

পৌরণিক ইতিহাস হতে জানা যায়- ব্রিটিশ শাসিত ভারত উপমহাদেশের শেষ স্বাধীন রাজ্য ছিল জৈন্তাপুর। শ্রীহট্ট তথা ভারত বর্ষের অধিকাংশ এলাকা যখন মোগল সাম্রাজ্যভূক্ত ছিলো, তখনও জৈন্তিয়া তার পৃথক ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছিল। প্রায় ৩৫ বছর স্বাধীন রাজ্য হিসাবে পরিচালিত হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র গ্রন্থ মহাভারত এবং রামায়নে জৈন্তিয়া রাজ্যের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য রয়েছে। ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দ রাজা বিজয় সিংহের শাসনকালে জৈন্তিয়ায় খনিজ সম্পদে ভরপুর ছিল বর্তমানেও রয়েছে। রাজা বিজয় সিংহ ১৭৭৮ সালে সারিঘাট ঢুপি গ্রামে রামেশ্বর শিব মন্দির স্থাপন করেন। ১৮৩৫ সালের ১৬ মার্চ হ্যারি নামক ইংরেজ রাজেন্দ্র সিংহকে কৌশলে বন্ধি করে মূল্যবান সম্পদ লুঠ করে নেয়। অার ডিবির হাওড় রাজা বিজয় সিংহের স্মৃতি বিজড়িত সমাধী স্থলেই লাল শাপলার বিল গুলো অবস্থিত। বিলের পারে বিজয় সিংহের সমাধি।

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বেলা ১২টা পর্যন্ত লাল শাপলার সৌন্দর্য্য দৃশ্যমান থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শাপলা গুলো নিশ্চুপ নীরব হয়ে যায়। লাল শাপলার ফুটন্ত ফুল ডিবির হাওড়ের আশ-পাশের পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর করে তুলে। অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ঘন কোয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ জেলা ও উপজেলা থেকে দল বেধে ছুটে আসা অগনিত পর্যটকদের ঢল নামে লাল শাপলার বিলে। বিলের লাল শাপলার ফুটন্ত ফুল যেন ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। রয়েছে নানা প্রজাতির অতিথি পাখির কিছির মিছির সুর যেন মনে হয় প্রকৃতি নিজে বাধ্য যন্ত্রের ধারা সুরের ঝর্ণা ধারা ছড়িয়ে দিচ্ছে৷

ডিবির হাওড় এর বিল গুলো বিগত ২০১৪ সনে স্থানীয় জাতিয় ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার কল্যাণে পর্যটকদের কাছে পরিচিতি লাভ করে। সম্প্রতি কিছু অসাধু ভূমি খেকুুচক্রের কুদৃষ্টি পড়ে লাল শাপলার বিল গুলোর জেগে উঠা জমির দিকে। চক্রটি বিভিন্ন ভাবে দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ৪টি বিলের মধ্যে হরফকাটা বিলটির সৌন্দর্য্য নষ্ট করে দিয়েছে। মহিষ নামিয়ে শাপলা ফুল ধ্বংস করে দেওয়া, শাপলার মূল উত্তোলন করে দেওয়ার ফলে বিলে শাপলা গাছ থাকলেও ফুল শূন্য হয়ে পড়েছে। ইজারানীতি অমান্য করে অসময়ে বিলের পানি শুকিয়ে শাপলার মূল ধ্বংস করার কারনে কেন্দ্রী বিলের সৌন্দর্য নষ্ট করে দিয়েছে।

অপরদিকে স্থানীয় সামাজিক সংঘটন ও প্রকৃতি প্রেমীরা বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওড়ের মধ্যে অন্যতম ডিবির হাওড়, হরফ কাটা, ইয়াম বিল ও কেন্দ্রী বিলের ইজারা বাতিল এবং বিল সমুহের ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বন্দোবস্তের অপচেষ্টা বন্দ করার বাতিলের দাবী জানান।

বিলগুলো রক্ষার্থে বাংলাদেশ পরিবেশ অান্দোলন বাপা’র উদ্যোগে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মানববন্ধন পালন করা হয়েছে। এছাড়া লাল শাপলা বাঁচাও অান্দোলন কমিটি ও জৈন্তিয়া পর্যটন উন্নয়ন ও সংরক্ষণ কমিটি লাল শাপলা বিল গুলোর লীজ বাতিল এবং পর্যটন কেন্দ্র ঘোষনার দাবী জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌরীন করিমের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবরে পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

পর্যটকদের মতে সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহের তালিকায় জৈন্তাপুর সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, মায়াবন, পান্থুমাই, মায়াবতী ঝর্ণা, বল্লঘাটের জমিদার বাড়ী, লালাখাল, শ্রীপুর চা-বাগান, জাফলং চা বাগান, ডিবির হাওড়ের লাল শাপলার ৪টি বিলও পর্যটকদের কাছে শীর্ষ স্থান দখল করে নিচ্ছে।
লাল শাপলার বিলে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা জানান- লাল শাপলার বিলের পরিবেশ অত্যান্ত মনোমুগ্ধকর। স্বাধীন জৈন্তিয়া রাজ্যের রাজা বিজয় সিংহের সমাধিস্থল, বিলের চার পাশে খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য্য বিলটিকে অার্কষণীয় করে তুলেছে৷ তুলে ভ্রমন পিপাসু ও পর্যটক প্রেমীদের আকর্ষিত করে। তারা লাল শাপলার বিল গুলোর লীজ বাতিল করে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার দাবী জানান।

Share





Related News

Comments are Closed