Main Menu

মাধবপুরে মা ও ২ সন্তান হত্যায় মামলা

বৈশাখী নিউজ ২৪ ডটকম: হবিগঞ্জের মাধবপুরে ২ শিশু হত্যা ও মায়ের গলায় ফাঁস দেয়া লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে সন্তানদের পাশাপাশি হাদিছাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর ফলে স্বামীর প্রতি সন্দেহ আরও ঘনিভূত হচ্ছে। এলাকাবাসী ও স্বজনদের সন্দেহের তীর হাদিছার স্বামীর দিকেই। ঘটনার পর থেকে স্বামী পলাতক থাকার কারণে এ সন্দেহ আরও তীব্র আকার ধারন করেছে। পুলিশ বলছে, স্বামীকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই সব খোলাসা হবে। এ ঘটনায় ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার বিকেলে নিহত হাদিছা বেগম (২৪), তাদের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে মীম আক্তার ও ৭ মাসের শিশু সন্তান মোজাহিদ মিয়ার ময়না তদন্ত শেষে এ তথ্য জানান হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ। তিনি জানান, দুই শিশুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার হওয়া হাদিছা বেগমের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে বলা যায় হাদিছা বেগমকে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত হাদিছা বেগম ও তার স্বামী মজিবুর রহমান মজিদ

এদিকে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ময়না তদন্ত শেষে লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাতে তাদেরকে হাদিছার বাবার বাড়ি ব্রাম্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার এনা গ্রামে দাফন করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত ৩১ আগষ্ট শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের নিজনগর গ্রামে ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান মজিদের ঘরে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আশপাশের লোকজন ওই ঘরের দিকে এগিয়ে যান। ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করলেও কেউ কোনো সাড়া মেলেনি। এক পর্যায়ে তারা উঁকি দিয়ে দেখতে পান মজিবুর রহমান মজিদের ঘরের ভেতর গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় তার স্ত্রী হাদিছা বেগমের লাশ ঝুলছে। আর খাটে তার আড়াই বছর বয়সী শিশু মিম আক্তারের গলা কাটা লাশ পড়ে রয়েছে। পরে স্থানীয় লোকজন পেছন দিকে গেলে অপর একটি তালাবদ্ধ কক্ষে ৭ মাস বয়সী শিশু মোজাহিদ মিয়ারও গলা কাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এ দৃশ্য দেখে তারা মাধবপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত প্রায় ১ টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তর জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।

ঘটনার পর থেকেই স্বামী মুজিবুর রহমান পলাতক থাকার কারণে তাকে ঘিরে সন্দেহের তীর সৃষ্টি হয়। গ্রামের লোকজন বলছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা ছিল না। এ নিয়ে একাধিবার শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গ্রামের মাতব্বররা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে মজিদের সঙ্গে হাদিছা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। মজিদের উগ্র মেজাজের কারণে সামান্য বিষয়েই সংসারে ঝগড়াঝাটি লেগে থাকত। মজিদ প্রায়ই তার স্ত্রীকে মারধর করতেন। ঘটনার ৩ দিন আগেও মজিদ তার শাশুড়ির সামনে হাদিছাকে মারধর করেন। তাদের দাবি, হাদিছা ও তার সন্তানদেরকে মজিদ নির্মমভাবে খুন করেছে।

অপরদিকে, গতকাল শনিবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে একজনকে আটক করেছে হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশ। পুলিশ একজনকে আটকের কথা গণমাধ্যমে স্বীকার করলেও তার নাম প্রকাশ করতে চায়নি। পুলিশ বলছে, আটককৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এস এম রাজু আহমেদ জানান, লাশের ময়না তদন্ত শেষে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাতেই তাদেরকে হাদিসার বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। পলাতক স্বামী মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।

এ ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত হাদিসার পিতা শামীম মিয়া বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ্য করে মাধবপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। একটি সূত্রে জানা গেছে, মামলায় স্বামী মুজিবুর রহমানসহ তার আত্মীয়-স্বজনদের আসামি করা হয়েছে।

মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার মামলা দায়ের কথা নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।

Share





Related News

Comments are Closed