Main Menu

পাঁচবিবিতে ঘাস চাষে সফল সাজ্জাদ হোসেন

মোঃ অালী হাসান, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি: পাঁচবিবি উপজেলার বিরঞ্জন গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন একসময় দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন তার বার্ষিক আয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। পাকা বাড়ি করেছেন। বাড়িতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পালন করছেন দুধেল গাভী। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে বেশ সচ্ছলভাবেই দিন যাচ্ছে তার। সাজ্জাদের এ অবিশ্বাস্য উত্থানের পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে উন্নত জাতের ঘাস চাষ। এক বিঘা দিয়ে শুরু করে এখন তিনি সাত বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করেন। তার মতোই এ গ্রামের মিজানুর, সামছুল, জিন্নাত আলী, সাখাওয়াত, শফিকুল ইসলামসহ অনেকেই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে হাইব্রিড নেপিয়ার ও পাকচং ঘাস চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলায় বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ ঘাস চাষ করে ভাগ্য ফিরিয়েছে। ঘাসের পাশাপাশি গরুর খামার করে তারা এখন প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। জয়পুরহাট প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাবে জেলার পাঁচ উপজেলায় তালিকাভুক্ত ঘাস চাষের পরিমাণ হচ্ছে— সদর উপজেলায় ১৭৮ বিঘা, পাঁচবিবিতে ৪৫ বিঘা, কালাইয়ে ৩৬ বিঘা, ক্ষেতলালে ৮ বিঘা ও আক্কেলপুর উপজেলায় ৩৩ বিঘা। এসব জমিতে পাকচং, নেপিয়ার ও জার্মান ঘাস চাষ হচ্ছে। অবশ্য কৃষি অফিসের হিসাবের বাইরে রয়েছেন আরো অনেক ঘাসচাষী।
পাঁচবিবি উপজেলার বিরঞ্জন গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, এ গ্রামেই ১১৩ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার পাটাবুকা, সমসাবাদ, ফেনতারা, চরাকেশবপুর, ধরঞ্জী, বাগজানাসহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ঘাসের চাষ দিন দিন বাড়ছে। স্বল্প পরিসরে ঘাস চাষ করে আজ গরুর বড় খামারি হওয়ার মতো সফলতার গল্পও আছে।
পাঁচবিবি উপজেলার নিলতা গ্রামের জসিম। বাবা ভ্যানচালক। অর্থাভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছিলেন না। দাখিল পরীক্ষার পর শুরু করেন গরুপালন। নিজের খামারের জন্যই ২০১২ সালের দিকে অল্প পরিসরে ঘাস চাষ করেন। এখন অন্যের সাত বিঘা জমি ইজারা নিয়ে ঘাস চাষ করছেন। বছরে তার মুনাফা হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। এ আয় থেকে গরুর শেড তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন করছেন। বর্তমানে মহিপুর সরকারি কলেজে বিএ (সম্মান) শেষ বর্ষে পড়ছেন জসিম। সংসারের ব্যয় বহনের পাশাপাশি দুই ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচও চালিয়ে যাচ্ছেন।
সদর উপজেলার বেলআমলা গ্রামের আব্দুল গফুর জানান, সারাদিন খেটে দুই থেকে আড়াইশ টাকা রোজগার করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। তখন চারটি এনজিও থেকে ঋণ নেন তিনি। এখন ঘাস চাষ করে সব ঋণ শোধ করেছেন। সংসার চলছে বেশ সচ্ছলভাবে।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশিদ জানান, গো-খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় বিকল্প হিসেবে উন্নত জাতের ঘাসের চাহিদা রয়েছে। এ কারণে খামারিরা ছাড়াও ভ্যান-রিকশা শ্রমিক ও দিনমজুররা ঘাস চাষে দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন। মূলত আড়াই বছর আগে তত্কালীন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রুস্তম আলী কৃষকদের বিনামূল্যে ঘাসের কাটিং সরবরাহের মাধ্যমে এ অঞ্চলে উন্নত ঘাস চাষে আগ্রহ তৈরি করেন। এ কার্যক্রম এখনো চলছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন সোনার বলেন, জেলায় এ ঘাসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সে তুলনায় আমরা কাটিং (মুথা) সরবরাহ করতে পারছি না।

Share





Related News

Comments are Closed